নারায়ণগঞ্জে দু'টি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে। রোববার দুপুরে বন্ধ ঘোষিত গার্মেন্টস অবিলম্বে চালুসহ আইনানুযায়ী শ্রমিকদের যাবতীয় প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মাষ্টার টেক্সটাইল গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাষাঢ়াস্থ বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা। অপরদিকে এক শ্রমিককে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরে ফতুল্লার মাসদাইরে সিটি কবরস্থানের সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় আরএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা। পরে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
জানা গেছে, ফতুল্লার উত্তর মাসদাইর কেতাবনগরে অবস্থিত মাস্টার টেক্সটাইল গার্মেন্টসটি বেশ কিছুদিন পূর্বে লেঅফ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। ওই বন্ধ ঘোষিত মাষ্টার টেক্সটাইল গার্মেন্টস অবিলম্বে চালু করা, শ্রমিকদের বকেয়া আইনানুগ যাবতীয় প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ করার দাবিতে রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে শ্রমিকরা। এসময় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট এর সভাপতি সেলিম মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা বাসদের সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ফতুল্লা থানা গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট এর সভাপতি মো. মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা কাদের।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন পরিশোধ না করে নানা রকম তালবাহানা করে থাকে, মাস্টার গার্মেন্টসের শ্রমিক আজ দুইমাস পূর্বের বেতন এখনো দেওয়া হয় নাই। মাস্টার টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি শ্রমিকের বেতন পরিশোধ না করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যখনই তাদের বেতন দাবি করা হয় তখন বেতন না দেওয়ার একটা তাল বাহানা শুরু করেন। আর দোষ দেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের তারা নাকি গার্মেন্টস খাতকে অচল করার একটা চক্রান্ত করে, কিন্তু আমি বলতে চাই শ্রমিকরা তালবাহানা করে না। সৎ পথে পরিশ্রম করে দুবেলা দু মুঠো ভাত খেতে চায় কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভিন্ন রূপ প্রকাশ করে শ্রমিকদের বেতন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। প্রশাসনকে অবগত করার পরেও কোন গুরুত্ব নেয়নি । প্রশাসন জেনেও চুপ করে আছে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না, আমরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি সবাইকে বলেছি সমস্যার কথা। আমরা শুনেছি বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় মানবতার প্রতীক আমরা আজকে দেখতে চাই কি রকম মানবতা তার মধ্যে আছে আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে ডিসি সাহেবকে জানিয়ে দিতে চাই। শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাবেশ শেষ হয়।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আরএস কম্পোজিটের এক শ্রমিককে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদার কালারের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে আর এস কম্পোজিটের শ্রমিকরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, শিল্প পুলিশ, ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক রাজীব ঘোষ জানান, মাস্টার টেক্সটাইলের মালিকপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য বৃহস্পতিবার তারিখ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি অসুস্থতার অজুহাতে আসেননি। অপরদিকে আর এস কম্পোজিটের এক শ্রমিকের সঙ্গে মাদার কালারের শ্রমিকদের মারামারিকে কেন্দ্র করে রোববার শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের উর্ধ্বতনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ছেড়ে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :