নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের দ্বি-বার্ষিক (২০২৫-২০২৭) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৫ ফেব্রুয়ারী। তবে এখনো ১৯ পদের বিপরীতে ২৬ জনের মনোনয়নপত্র জমা রয়েছে। আপাতত চলছে শেষ সময়ের সমঝোতা। তবে অ্যাসোসিয়েট গ্রুপে ৬ জনের বিপরীতে ৭ জনের মনোনয়নপত্র জমা হলেও একজন সরে যেতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু জেনারেল গ্রুপ ১২ জনের বিপরীতে রয়ে গেছে ১৮ জন। এ জেনারেল গ্রুপ হতে ৬ জনের সঙ্গে সমঝোতার শেষ চেষ্টা চলছে।
ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানান, ৩ ফেব্রুয়ারী হোসিয়ারী সমিতির নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন ঘিরে হোসিয়ারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দুটি প্যানেলের বিরামহীন প্রচারণায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে হোসিয়ারী পল্লীর ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, নির্বাচন হলে ব্যবসায়ীদের কদর থাকে। তাদের কাছে নিয়মিত প্রার্থীরা যান। তাদের যে কোন সমস্যায় নেতাদের কাছে পাওয়া যায়। কিন্তু গত দেড় দশক ধরে মাঝে দুটি ছাড়া বাকি সময়ে ভোট হয়নি। ওসমান পরিবার সিলেকশন করে দিতেন বিজয়।
এ অবস্থায় চেম্বারের নির্বাচনেও ভোট চাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন ভোট হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিবে। কারণ চেম্বারকে গত এক দশক করে ওসমান পরিবার কুক্ষিগত করে রেখেছিল।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের চেম্বারে নির্বাচনে ভোটের চেয়ে বর্তমান সভাপতি মাসুদুজ্জামান নিজের চেয়ার ধরে রাখতে সকলের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বিগত কমিটির ৮ জনের মধ্যে একজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে আগের কমিটির ৭ জন এখনো মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করেনি। তারাও চাচ্ছেন এবার পরিচালক পদে জয়ী হতে। এসব নিয়ে চলছে নানা দেনদরবার।
জেনারেল গ্রুপে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও মহসিন রাব্বানি মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। জেনারেল গ্রুপে ১২টি পদের বিপরীতে ১৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
তাঁরা হলেন মাসুদুজ্জামান, মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া, রতন কুমার সাহা, মাহবুবুর রহমান স্বপন, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, মো. আবু জাফর, গোলাম মোহাম্মদ কায়সার, আব্দুল হাই রাজু, হোসেন মোহাম্মদ তানিম তৌহিদ, মজিবর রহমান, গোলাম সারোয়ার সাঈদ, নাসির উদ্দিন, মো. সোহাগ, মো. বজলুর রহমান, মো. হানিফ মিয়া, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহফুজুর রহমান খান (মাহফুজ), আহমেদুর রহমান তনু।
অ্যাসোসিয়েট গ্রুপে ৬ টি পদের বিপরীতে ৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
তাঁরা হলেন মোর্শেদ সারোয়ার, সোহেল আক্তার, খন্দকার সাইফুল ইসলাম, আশিকুর রহমান, হাজী মোহাম্মদ জাকারিয়া ওয়াহিদ, মোস্তফা এনামুল হক, মনিরুল ইসলাম।
ট্রেড গ্রুপে ১টি পদের বিপরীতে একমাত্র বিকাশ চন্দ্র সাহা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে রয়েছেন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ দীর্ঘ সময়ে দখল রেখেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। বিএনপির সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী বাদ দিয়ে সভাপতি চেয়ারে বসেন সেলিম ওসমান। এরপর থেকে টানা সভাপতি থেকে থামেন ২০১৮ সালে। ওই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তার স্থলে বসেন তার খালেদ হায়দার খান কাজল। চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বি-বার্ষিক (২০১৮-২০২০) নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। অসুস্থ অবস্থা নিয়ে তিনি ৬ বছর ২ মাস দায়িত্ব শেষে গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন।
চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর (২০২৩-২০২৫) মেয়াদও সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ও সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেন। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের মাধ্যমে তাদের এই পদত্যাগ করেন বলে জানা যায়। তাদের শূন্য পদের জন্য কো-অপ্ট করে প্রথমে পরিচালক হিসেবে মডেল ডি ক্যাপিটাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান নির্বাচিত করে নতুন সভাপতি দায়িত্ব দেয়া হয়। সাজনুর স্থলে পরিচালক সোহেল আক্তারকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। জরুরি সভায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেলের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, রতন কুমার সাহা, মাহবুবুর রহমান, মহসিন রব্বানী, তারেক সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ আবু জাফর, মো. সেলিম হোসেন, সোহেল আক্তার, আশিকুর রহমান, মো. জাকারিয়া ওয়াহিদ। উপস্থিত ছিলেন না ছাত্র-জনতা হতাহত মামলার আসামী ও চেম্বারের পরিচালক মোঃ নাজমুল আলম সজল, ইমতিনান ওসমান অয়ন, মোঃ এহসানুল হাসান নিপু। তবে সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের পরিচালক পদ বাতিল করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তারা এখনো চেম্বারের পরিচালক।
গত ৫ আগস্টে পর বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও খালেদ হায়দার খান কাজল। তাদের স্থানে বিকেএমইএতে থাকা নির্বাহী সভাপতি মুহাম্মদ হাতেম সভাপতি হয়েছেন এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন বিকেএমইএ পরিচালক, চেম্বারের সহ-সভাপতি ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, বিকেএমইএ ও চেম্বারের পরিচালক জেলা যুবলীগ নেতা এহসানুল হক নিপু এবং সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে চেম্বারের পরিচালক অয়ন ওসমান ও আরেক পরিচালক নাজমুল আলম সজল।
আপনার মতামত লিখুন :