নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা নানা রকমের প্রতিকূলতা পেরিয়েও সরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নানান রকমের প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও কিছু কিছু কাজে তারা বেশ সফলতা দেখিয়ে আসছেন। সেই সাথে দিন যাওয়ার সাথে সাথে তারাও বেশ শক্ত অবস্থানে ফিরতে শুরু করেছেন। নতুনভাবে তারা জনগণের আস্থায় ফিরতে শুরু করছেন।
সূত্র বলছে, টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতা শেষ করে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেছিলেন আওয়ামী লীগ। আর এই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সবকিছুতেই তারা একচেটিয়াভাবে দলীয় করণ করেন। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের সর্বস্তরেই দলীয়করণ করা হয়। একই সাথে তার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন।
যার সূত্র ধরে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি মানুষের অনেক অনাস্থা তৈরি হয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে তারা সাধারণ জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যান।
এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আকড়ে ধরা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তবে এই পতনকে টেকিয়ে রাখার জন্য তারা ঢাল হিসেবে পুলিশ প্রশাসনকেই বেশি ব্যবহার করেন। পুলিশ প্রশাসনকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন হয়। তবে আওয়ামী লীগ পুলিশ প্রশাসনকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার কারণে সাধারণ জনসাধারণের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। যার ধারাবাহিকতা নারায়ণগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়।
তবে ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে পুলিশ প্রশাসন আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অন্যতম প্রধান উপকরণ যানবাহনের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও তারা কোনো কোনো কিছুতেই যেন আটকে নেই। কোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই তারা অ্যাকশনে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সবদিকেই তারা সতর্ক অবস্থানে থাকছেন।
জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর ভোরে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশর (এআইইউবি) কম্পিউন্টার সায়েন্ট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সীমান্ত কলেজে যাবার পথে নগরের দেওভোগ এলাকায় মগ্যার্ণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন।
বাধা দেওয়ায় ছিনতাইকারীরা সীমান্তকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। গুরুতর আহবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর গত ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সীমান্ত মারা যায়। সীমান্ত নগরের দেওভোগ এলাকার হাজী আলমের ছেলে।
এই মৃত্যুর ঘটনায় শহরজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সেই সাথে পুলিশ প্রশাসনও বসে থাকেননি। তারা সাথে সাথেই সীমান্তর বাবা মামলা করার অনিচ্ছা থাকা সত্বেও তাকে বুঝিয়ে এই ঘটনায় মামলা দায়ের করান। মামলা দায়েরের পাশাপাশি তারা জোড়ালোভাবে মাঠে নামেন।
একই সাথে অল্প সময়ের মধ্যেই পুলিশ তদন্ত করে তিনজনকে সনাক্ত করে। তাদের মধ্যে আকাশ খানকে গত ১৮ ডিসেম্বর কাশিপুর থেকে এবং অনিককে গত ১৭ ডিসেম্বর দেওভোগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুইজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। বাকী একজনকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাছির আহমেদ।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের আন্তঃজেলা গাড়ি চোর চক্রের মূল হোতা সহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা গাড়ি চোর চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, চক্রের মূল হোতা ফতুল্লা থানার জালকুঁড়ি পশ্চিমপাড়ার মোহর মাস্টারের ছেলে আতাউর রহমান (৩৫), সোনারগাঁও থানার নুনের টেকের মৃত আসমত আলীর ছেলে সুমন মন্ডল (৪২), ফতুল্লার জালকুঁড়ি পশ্চিম পাড়ার মৃত. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ওয়াফি (২৫), গোদনাইল সৈয়দ পাড়ার মৃত. দুলাল ভুঁইয়ার ছেলে বাবু ভুঁইয়া ও জালকুঁড়ি দক্ষিণপাড়ার মো. ছানোয়ার আলীর ছেলে মো. রাজিব হোসেন (৩৬)। তাদের কাছ থেকে একটি মাইক্রোবাস, দুটি সিএনজি ও তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, গত বুধবার মধ্যরাতে ফতুল্লার সাইনবোর্ডে পিবিআই অফিসের সামনে মনির মিয়ার গ্যারেজের পাশে চোরাই গাড়ি কেনাবেচা করা হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আতাউর, সুমন মন্ডল ও রাজিব হোসেনকে গ্রেফতার করে। ঐ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোটর সাইকেল ও একটি সিএনজি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যে রাত তিনটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুঁড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওয়াফি ও বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেখানো মতো, ওয়াফির বাসার গলি থেকে একটি নোয়া মাইক্রোবাস ও একটি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত রোববার রাত ২টার দিকে মাইক্রোবাসে করে বান্দরবানের লামায় যাবার পথে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একদল অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন ছাত্রনেতারা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাইকারীরা ছাত্রনেতাদের মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনতাই করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এই ঘটনার সাথে সাথেই পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়। সোনারগাঁ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করার কাজে লেগে যায়। প্রথমে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে অন্য আসামীদেরও গ্রেফতার করা হয়। আর এভাবেই সকল প্রতিন্ধকতা পেরিয়ে ক্রমান্বয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন যেন এগিয়ে যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :